প্রত্যেকের জীবনে কোনো না কোনো ইচ্ছা থেকেই থাকে । আর এই ইচ্ছাগুলো মানুষ জন্মসূত্রে তার রক্তে প্রবেশ করিয়ে থাকে। আমি সবার মতই রক্তে মাংসে গড়া একটা মানুষ যার রয়েছে সহস্র ইচ্ছা আকাঙ্খা । আমার যে ইচ্ছা গুলো রয়েছে তার 90-95 ভাগ অপূর্ণই রয়ে গেছে। আজকের এই লেখাটা মূলত পক্ষে আমার সেই ইচ্ছা গুলো নিয়ে। আমার জীবনে যত ইচ্ছা আছে সব গুলো বলতে পারব না, তারমধ্যে দু’চারটা বলব যেগুলো হয়েছে বা হয় নাই অথবা ভবিষ্যৎ এ হবে।
[আশা করি আজকের এই লেখাগুলো ভবিষ্যতে আমার নতুন কোন পথ খুলে দিতে সাহায্য করবে।]
আমার জীবনে যে ইচ্ছা গুলো পূরণ হয়েছে বা অপূর্ণ রয়ে গেছেঃ
আমার জীবনে যে ইচ্ছা গুলো পূরণ হয়েছে তার কয়েকটা উদাহরণ নিচে দেওয়া হল।
1. আমার যে প্রথম ইচ্ছেটা ছিল তা হল পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পাওয়া সেটা আমি পেয়েছি তবে সাধারন গ্রেড কিন্তু এপ্লাস পাই নি, পেয়েছি জিপিএ-৪.৮৬।
2. আর দ্বিতীয়ত যে ইচ্ছাটা ছিল তা হলো ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের স্কুলে আমি প্রথম স্থান দখল করব, তা করতে সক্ষম হয়েছি কিন্তু পরবর্তীতে আমার রোল নং-১ ধরে রাখতে পারিনি। আমার রোল ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ১,২,৩,৪,৫ হয়। দিনদিন এত পরিশ্রম করেও পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়াটা আমার হতাশার কারণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
3. যাইহোক, স্কুলে ওঠে সাইকেল কেনার যে ইচ্ছা-বাসনা জেগেছিল তা আমার পরিবার মেটাতে সক্ষম হয়েছিল। তবে আরেকটা ইচ্ছে ছিল যে আমি স্মার্টফোন চালাবো কিন্তু তখন আমি সবে স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ি বলে তাতে কেউ সমর্থ দেয়নি। পরবর্তীতে আমি আমার পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তির টাকা দিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে প্রথম স্মার্টফোন কিনে আমার ইচ্ছা পূরণ করি। পরিবারের একজনের সম্মতিক্রমেই তা কিনেছিলাম।
4. যখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশোনা করি, তখন আমার মনে একটা জেদ এবং প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল যে আমি প্রত্যেকটা বিষয়ে এ-প্লাস পেয়ে জিপিএ-ফাইভ পেতে চাই অর্থাৎ গোল্ডেন এ-প্লাস পাব এবং আবার সেই নবম শ্রেণীর প্রথম স্থান হবে আমার। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীতে এ-প্লাস পেয়েছি ঠিকই তবে গোল্ডেন এ-প্লাস পাই নি। বলে রাখি, আমি অষ্টম শ্রেণীতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিলাম।
5. নবম শ্রেণীর প্রথম দিকে আমি কিছুটা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু বেশ কিছুদিনের মধ্যেই আবার পড়ালেখায় মনোযোগী হই যাতে করে দশম শ্রেণীতে সকলকে চমক দেখাতে পারি। এসএসসি পরীক্ষায় সকলকে চমক দেখিয়ে ছিলাম, তা হল gpa-5 না পাওয়া। পছন্দের বিষয়গুলোতে ৭৯,৭৮ সর্বনিম্ন ৭৭ পেয়ে ssc এর জিপিএ-৫ মিস করি।
6. কলেজে ভর্তি হবার পূর্বে ইচ্ছা ছিল একটা ল্যাপটপ কিনে Freelancing শুরু করব, বাড়িতেই নিজের পড়াশোনা নিজে চালিয়ে যাব। ওই ভাবে বলতে পারি নাই যে আমার ল্যাপটপ লাগবে আমি অনলাইনে ইনকাম শুরু করব। তাই সেটাও ব্যর্থ হইলো।
7. পরিবারের কথা মত চলে যাই ঢাকা, সেখানে লেখাপড়া করব এবং কলেজের লেখা-পড়া শেষ হলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিব তাতে উত্তীর্ণ হয়ে সনামধন্য মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করব। তা আর হল কোথায়? বরাবরের মতো এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-ফাইভ পাইনি। আর আমার যে স্বপ্ন ছিল তা সেখানেই ভেঙ্গে যায় কিন্তু তাতে তখনও আমি হাল ছাড়িনি।
8. ডাক্তার না হতে পারলেও, কম্পিউটার বিজ্ঞানের একজন ছাত্র হব। কিন্ত HSC তে পদার্থ এবং গণিতে খারাপ হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষার রিকোয়ারমেন্টে আমি অযোগ্য হই। ফলে কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার স্বপ্ন বা ইচ্ছা সেখানেই লীন হয়ে যায়।
9. অবশেষে, অন্ধকারে ছুটতে থাকি। যখন সব ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাই শেষ হয়ে গেল তখন নিজের সম্মান রক্ষার্থে কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যে কোন সাবজেক্টে পড়াশোনা করব। এই ভেবে দু-তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেই, তাতেও কোনো সফলতার মুখ দেখতে পাই নাই। আর এমন সময়ই আমার পরিবার আমার পাশে আসে এবং নতুন সিদ্ধান্তের সূচনা করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ আমি আবার দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিব।
10. উল্লেখ্য যে, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অর্থাৎ আগস্ট-2019 এ আমি ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইনে একটা ব্যবসা শুরু করেছিলাম। তাতে কিছুটা সফল হলেও 90 ভাগ ছিল অসফলতার। ফলে আমি অনলাইন ব্যবসাটি ছেড়ে দিয়েছি।
11. আরো উল্লেখ্য যে, আমি গত এইচএসসি পরীক্ষার পর মে-2019 এ একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলি। ভাবছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব আর আমার ইউটিউব চ্যানেলটির বিকাশ করব কিন্তু তা আর হলো না।
আর এই 2020 বছরটিতে, করোনার (কোভিড-১৯ এর) কারণে ভবিষ্যৎ স্থগিত হয়ে আছে। তাছাড়া, জীবনে চলার গতি পথ পাল্টে দিচ্ছে। যে ইচ্ছা বা আকাঙ্খা আছে তা পূরণ হবে কি না তা-ও একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
বর্তমান সময়টাতে আমি পড়াশোনা করতাম কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পড়াশোনা তো হচ্ছেই না বরং নানা চিন্তাভাবনা আর বর্থ্যতার-হতাশার মধ্য দিয়ে সময় যাচ্ছে।
মন থেকে এসব ব্যর্থতার গ্লানি দূর করতেই অনলাইনে পড়ে থাকা, বর্তমানে আমি অনলাইনে ব্লগিং করতেছি।
আজকের এই লেখাগুলো ছিল মূলত পক্ষে আমার লেখাপড়ার জীবনের ফিডব্যাক অর্থাৎ পেছন ফিরে দেখলাম যে জীবনটাকে কি করতে চাচ্ছিলাম আর কি হয়ে যাচ্ছে।
0 Comments